নিয়াজ কওছার তুহিন: সাতক্ষীরার কালিগঞ্জের নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বন্ধ হওয়া পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ১০ দিন বন্ধ থাকার পর বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) সাতক্ষীরা-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি অধ্যাপক ডা. আফম রুহল হক এর বিশেষ উদ্যোগে ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয় প্রাঙ্গন আবারও শিক্ষার্থীদের পদচারণায় মূখরিত হয়ে ওঠে।
সরেজমিন জানা গেছে, অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক এমপি বৃহস্পতিবার সকালে নলতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের সমাবেশের মাধ্যমে পাঠদান কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। এ সময় তিনি শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন পরামর্শ দেন। সকাল ৯ টার আগে সকল শিক্ষার্থীকে স্কুলে প্রবেশ করতে হবে এবং ছুটি না হওয়া পর্যন্ত ক্যাম্পাসের বাইরে না যাওয়ার নির্দেশের পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মোবাইল ব্যবহার বন্ধসহ বিভিন্ন নির্দেশনা প্রদান করেন তিনি। এসময় পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছাড়াও অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন নলতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আনিসুজ্জামান খোকন, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক গাজী মিজানূর রহমান প্রমুখ।
এর আগে গত ১৬ জুলাই সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে বিদ্যালয়ের বর্ধিত ভবনের তৃতীয় তলায় কেক কেটে ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রীর জন্মদিন পালনকে কেন্দ্র করে শিক্ষকের মারপিটের শিকার হয় নবম শ্রেণির ছাত্র রাজপ্রতাপ দাস (১৫)। এদিন বেলা সোয়া ১২ টার দিকে বাড়ি যেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় মৃত্যু হয় রাজপ্রতাপ দাসের। এঘটনায় রাজপ্রতাপের লাশ নিয়ে বিক্ষোভের পাশাপাশি স্কুলে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। শিক্ষকদের ব্যবহৃত ৮ টি মোটরসাইকেল, ২ টি সাইকেল ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধরা। আগুনে পুড়িয়ে ভস্মীভূত করা হয় দুই শিক্ষকের মোটরসাইকেল। এঘটনায় স্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মোনায়েম, সহকারী প্রধান শিক্ষক আব্দুল মুহিত, সহকারী শিক্ষক অবকাশ চন্দ্র খাঁ ও সিদ্ধার্থ রায় চৌধুরীকে হেফাজতে নেয় পুলিশ। পরদিন (১৭ জুলাই) নিহত রাজপ্রতাপের পিতা উপজেলার ভাড়াশিমলা ইউনিয়নের হিজলা চন্ডিপুর গ্রামের দীনবন্ধু দাস বাদী হয়ে ওই চার শিক্ষক ও মনিরুল ইসলাম নামে অপর এক শিক্ষকের বিরুদ্ধে থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। মামলায় চার শিক্ষককে গ্রেফতার দেখায় পুলিশ। এরপর থেকে বন্ধ থাকে পাঠদান কার্যক্রম। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসক ও জেলা শিক্ষা অফিসার পৃথক দু’টি কমিটি গঠন করেন। গ্রেফতারকৃত চার শিক্ষক বর্তমানে জেলা কারাগারে রয়েছেন। মামলার অপর আসামি সহকারী শিক্ষক মনিরুল ইসলাম উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন বলে জানা গেছে।
এদিকে বিদ্যালয়ের পরিবেশ স্বাভাবিক করার জন্য গত রবিবার (২৩ জুলাই) সকালে অধ্যাপক ডা. আফম রুহুল হক এমপির উদ্যোগে অনুষ্ঠিত অভিভাবক সম্মেলনে দ্রুত স্কুলের পাঠদান কার্যক্রম শুরুর পাশাপাশি লেখাপড়ার সুষ্ঠু পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবার থেকে পাঠদান কার্যক্রম শুরুর মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক, এলাকাবাসীসহ সংশ্লিষ্ট সকলের মাঝে স্বস্তি ফিরে এসেছে।