ঢাকারবিবার , ১৭ মার্চ ২০২৪
  1. অন্যান্য
  2. অপরাধ ও বিচার
  3. অর্থনীতি
  4. আন্তর্জাতিক
  5. ইসলাম ও জীবন
  6. কবিতা
  7. কৃষি ও চাষাবাদ
  8. ক্যাম্পাস
  9. খুলনা
  10. খেলাধুলা
  11. চট্টগ্রাম
  12. জাতীয়
  13. ঢাকা
  14. তথ্যপ্রযুক্তি
  15. দেশ ও জনপদ
আজকের সর্বশেষ সবখবর

আশাশুনিতে চলাচলের রাস্তা ও টেকসই নদীরক্ষা বাঁধের দাবিতে মানববন্ধন 

নিউজ.
মার্চ ১৭, ২০২৪ ১:৫০ অপরাহ্ণ
Link Copied!

বিএম আলাউদ্দীন, আশাশুনি (সাতক্ষীরা):
আশাশুনি উপজেলার সদর ইউনিয়নের দয়ারঘাট টু বলাবাড়িয়া গ্রামের একমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং খোলপেটুয়া নদীর টেকসই নদীরক্ষা বাঁধের দাবিতে দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। রবিবার বেলা সাড়ে ১১টায় বলাবাড়িয়া গামী অস্থায়ী সড়কে গ্রামবাসীর আয়োজনে এ দীর্ঘ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
 অনুষ্ঠিত দীর্ঘ মানববন্ধনে দক্ষিণ বলাবাড়িয়া, উত্তর বলাবাড়িয়া, হাসখালি গ্রামের সর্বস্তরের সাধারন মানুষ অংশগ্রহণ করেন।
দীর্ঘ ২৯ বছর বলাবাড়িয়া গ্রামের সাথে আশাশুনি সদরের সাথে স্থায়ী যোগাযোগ ব্যবস্থা না থাকায় দীর্ঘদিন এই এলাকার মানুষ মৎস্য ঘেরের রিং বেড়ীবাঁধ তাদের চলাচলের একমাত্র মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করে আসছিলেন। এতে করে জরুরী সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য মানবতার জীবন যাপন করছিল এ এলাকার সাধারণ মানুষ। প্রতি বছরে বর্ষা মৌসুমে এ এলাকার মানুষের ভাগ্যে নেমে আসে করুণ দশা। নদীর জোয়ারে দেখা দেয় জলোচ্ছ্বাস। সে কারণে চলতি মৌসুমে জলোচ্ছ্বাস রোধকল্পে ও বলাবাড়িয়া গ্রামবাসীর চলাচলের পথ সৃষ্টি করার লক্ষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের এনডিআর এর মাধ্যমে মাটির বেড়ীবাঁধ রাস্তা নির্মাণ কাজ শুরু হয়।
অনুষ্ঠিত মানববন্ধনে আশাশুনি সদরের বলাবাড়িয়া গ্রামের শিক্ষার্থী পূরবী রানী মন্ডল বলেন বর্ষার দিনে কাদামাটি মেখে অতি কষ্টে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যেতে হয় তাদের।
একই গ্রামের গৃহবধূ মিতা মন্ডল বলেন দীর্ঘদিন আমাদের গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা (রাস্তা) না থাকায় সুপীয় খাবার পানি, পণ্য পরিবহন, স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে জরুরী অ্যাম্বুলেন্স সেবা থেকে বঞ্চিত ছিলেন তারা।
বলাবাড়িয়া গ্রামের সুভাষ চন্দ্র মন্ডল বলেন আশাশুনি সদর ইউপি চেয়ারম্যান এস এম হোসেনুজ্জামানের সার্বিক ব্যবস্থাপন এনডিআর এর মাধ্যমে বলাবাড়িয়া গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল রাখতে স্থানীয় জমি মালিকদের সাথে কথা বলে রেকর্ডিং এর সম্পত্তির উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করেছেন। এর ফলে বলাবাড়িয়া গ্রামের সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘব হবে।
স্থানীয় নিমাই চন্দ্র মন্ডল বলেন, ভালো কাজ করতে গেলেই বাঁধাবিঘ্ন থাকবেই। তাই সকল বাঁধাকে উপেক্ষা করে জনগণের স্বার্থে নদীরক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা অতি জরুরী।
ইউপি চেয়ারম্যান এস এম হোসেনুজ্জামান বলেন দীর্ঘ ২৯ বছর পর পানি উন্নয়ন বোর্ডের এনডিআর ও জরুরী সেবা খাত থেকে রিং বেড়ীবাঁধের স্থলে মাটির বেড়ীবাঁধ নির্মাণ করা হচ্ছে। এতে করে খোলপেটুয়া নদীর জোয়ারের পানি থেকে আশাশুনি সদর ইউনিয়নসহ উপজেলাকে প্লাবিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যাবে। একই সাথে বলাবাড়িয়া গ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা সচল করা সম্ভব হবে। তবে আগামীতে জমি অধিগ্রহণ পূর্বক স্থায়ী ভাবে টেকসই নদীরক্ষা বাঁধের দাবি জানান তিনি।
এ ব্যাপারে মুঠো ফোনে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা পানি উন্নয়ন বোর্ড-০২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আশিকুর রহমান বলেন, বর্তমানে যে রিং বাঁধ আছে তা সংস্কারের জন্য রক্ষণাবেক্ষণ খাত থেকে আনুমানিক ২৫ লাখ টাকার একটি বাজেট দেওয়া হয়েছে। সেখানে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা নিয়মিত তদারকি করে যাচ্ছে। বাঁধা বিঘ্ন বা কোন অভিযোগ থাকলে তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে সে মোতাবেক ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান তিনি।
এদিকে জমির উপর দিয়ে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করায় ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা জানান আশাশুনি সদরে প্রায় ৩০ বছর ধরে ফেলে রাখা খোলপেটুয়া নদীর ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কাণ্ড দেখে হয়রান জমির মালিকরা। নদী সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করে ২০/২০০ মিটার দুর থেকে অন্যের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধটিকে পাউবোর বাঁধ হিসেবে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়ায় ক্ষুব্ধ জমির মালিক বৃন্দ। তারা আরো জানান ১৯৯৫ সালে আশাশুনি সদরের দয়ারঘাট ও বলাবাড়িয়া গ্রামের মধ্যবর্ত্তী স্লুইসগেট সংলগ্ন এলাকায় খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে প্লাবিত হয়ে যায়। এর কয়েক মাস পর প্রায় দেড় হাজার বিঘা জমি জুড়ে রিং বাঁধ দিয়ে জোয়ারের পানি আটকানো হয়। এরপর থেকে প্রায় দশ বছর যাবত বলাবাড়িয়া গ্রামে যাতায়াতের জন্য খেয়া ঘাটের নৌকাই সম্বল ছিল। ২০০৬ সালে খুলনার জনৈক ব্যবসায়ী আব্দুল হাই বাহার রিং বাঁধের মধ্যে থাকা ওই দেড় হাজার বিঘা জমিতে এক বছর ফ্রী মাছ চাষ করবেন বলে দয়ারঘাট থেকে বলাবাড়িয়া গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৬৫০ মিটার বাঁধ দিয়ে ভেতরে মাছ চাষ শুরু করেন। সেই থেকে অদ্যাবধি ওই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। সেই থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের লোকজন বাহার সাহেবের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধ দিয়েই যাতায়াত করে থাকেন। এরপর থেকে সিডর, আইলা, মহাসেন, বুলবুলি, আম্ফান, ইয়াস সহ যতবার জলোচ্ছ্বাস হয়েছে ততবারই বাহার সাহেবের চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধ ভেঙে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি সদর বিচ্ছিন্ন হয়েছে। প্রত্যেক বারই ওই ঘের মালিকরা তাদের বাঁধটি সংস্কার করেন। এতে পানি উন্নয়ন বোর্ড একটি পয়সাও খরচ করেনি। তবে আম্ফান পরবর্তী সময়ে উপজেলা পরিষদ থেকে এই বেড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য ৪ টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়। দুর্যোগ এর সময় এ বাঁধের জন্য কিছু চাইলে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বলেছেন আমাদের কোন বাজেট নেই। এই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে বলাবাড়িয়া থেকে আশাশুনি উপজেলা সদরে যোগাযোগের সরকারি রাস্তার ব্যবস্থা করতে দৈনিক সুপ্রভাত সাতক্ষীরা পত্রিকাসহ স্থানীয় ও জাতীয় পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হলে টনক নড়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের। সর্বশেষ তাঁরা ওই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কিন্তু নদী সংলগ্ন এলাকায় বাঁধ নির্মাণ না করে উক্ত চিংড়ি ঘেরের কলগৈ (স্লুইসগেট) বাঁচাতে নদী থেকে কোথাও ২০ মিটার কোথাও ২০০ মিটার বাদ দিয়ে একটি পরিবারকে (পঞ্চানন মণ্ডল) বেড়িবাঁধের বাইরে রেখে কাজ করার পরিকল্পনা করেছেন বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা। তাদের দাবি বেড়িবাঁধের নকশা প্রণয়নের সময় সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের সাথে কোন কথা না বলে তাদের সুবিধা মতো রেকর্ডীয় সম্পত্তির উপর দিয়ে বাঁধ নির্মাণের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
কাজ শুরু হলেও এর বরাদ্দ কত, কিভাবে কতদূর কাজ হবে, কোন ঠিকাদরী প্রতিষ্ঠান কাজ করবেন কেউ জানে না কারণ কাজের সাইটে কোন সাইনবোর্ড নেই।
জমির মালিকের পক্ষে তারাপদ মণ্ডল, গোবিন্দ মণ্ডল, অতুল প্রসাদ রায়, বিভূতি ভূষণ রায়, পিয়াস মণ্ডল, পঞ্চানন মণ্ডল নদী সংলগ্ন বেড়িবাঁধের নির্মাণের দাবিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছেন। এতে পঞ্চানন মণ্ডলের বসতভিটা কান্ট্রি সাইটে থাকবে। সাথে সাথে সংশ্লিষ্টদের চাষাবাদের ২০ বিঘা জমি থাকবে। আবার কেউ কেউ অপপ্রচার চালাচ্ছে স্থানীয় লোকজন বাঁধের জন্য জমি দিতে চাচ্ছেন না। বাঁধ সংলগ্ন প্রায় ১০০ মিটার এলাকা জুড়ে ৩ একর জমির ইজারা প্রাপ্ত আশাশুনি সদরের শফিকুল ইসলাম বলেন, আমি বাঁধের জন্য জমি দেবো না বলিনি। বরং নদী সংলগ্ন এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণ হলে আমি সহ এলাকাবাসী উপকৃত হবে। জমির কাগজপত্র নিয়ে এক জায়গায় বসে আলোচনা করে কাজ শুরু করলে ভালো হয়।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা এস ও মোমিনুল ইসলামের সাথে কথা বললে তিনি বলেন, আমরা জনগণের যেভাবে সুবিধা হবে সেভাবেই কাজ করব। যদি কোন জমির মালিকের অভিযোগ থাকে আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সমাধানের চেষ্টা করবো।
এদিকে রবিবার সকালে বলাবাড়িয়া গ্রামের শতাধিক নারী-পুরুষ বাঁধ এলাকায় তাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করার জন্য সাংবাদিকদের সাথে কথা বলেন এবং তাৎক্ষণিক ভাবে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন। তারা বলেন যেভাবে হোক যেদিক দিয়েই হোক আমাদের যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন। সরকারি কোন রাস্তা না থাকায় এ গ্রামে একটি গাড়ি ঢুকতে পারে না। বর্ষা মৌসুমে যোগাযোগ ব্যবস্থা চরম অবনতি ঘটে। মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নিমাই মণ্ডল, বিনয় কৃষ্ণ মণ্ডল, সুভাষ চন্দ্র মণ্ডল প্রমুখ।
এ ব্যাপারে ইউপি চেয়ারম্যান এসএম হোসেনুজ্জামান হোসেন জানান, এলাকার সর্বস্তরের মানুষের কথা ভেবে এই ৬৫০ মিটার বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড। কিছু বাঁধা বিপত্তি দেখা দিচ্ছে। তাই সংশ্লিষ্ট জমির মালিকের কাগজপত্র নিয়ে বসে সবার সাথে কথা কাজটি সম্পন্ন করতে চাই। বেড়িবাঁধটি নির্মাণ হলে সদর থেকে বলাবাড়িয়া গ্রামের যাতায়াতের নতুন দ্বার উন্মোচন হবে।

এই সাইটে নিজম্ব নিউজ তৈরির পাশাপাশি বিভিন্ন নিউজ সাইট থেকে খবর সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট সূত্রসহ প্রকাশ করে থাকি। তাই কোন খবর নিয়ে আপত্তি বা অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট নিউজ সাইটের কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার অনুরোধ রইলো।বিনা অনুমতিতে এই সাইটের সংবাদ, আলোকচিত্র অডিও ও ভিডিও ব্যবহার করা বেআইনি।