নিয়াজ কওছার তুহিন: প্রথম ধাপে ৫৯ জেলার ১৫২ উপজেলা পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। তার মধ্যে রয়েছে বিশ^বরেণ্য ক্রিকেটার কাটার মাস্টার মোস্তাফিজুর রহমানের জন্মভূমি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলা। আগামী ৮ মে’র এ নির্বাচনকে সামনে রেখে অনেক আগেই মাঠে নেমেছিলেন আওয়ামী লীগের দুই ও জামায়াতের এক প্রার্থী। জামায়াতের প্রার্থী সরে দাড়াচ্ছেন বলে গুঞ্জন উঠলেও শেষ পর্যন্ত ৩ প্রার্থীই নির্দ্ধারিত সময়ে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
জানা গেছে, পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করেছিলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি সাঈদ মেহেদী। এবারও তিনি মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
এছাড়া বিগত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার শেখ মেহেদী হাসান সুমন। কুশুলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান থাকা অবস্থায় উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণের লক্ষ্যে পদত্যাগ করে প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নেমে চমক দেখান প্রয়াত উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের বারবার নির্বাচিত সভাপতি এবং মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার শেখ ওয়াহেদুজ্জামান এর জ্যেষ্ঠ পুত্র শেখ মেহেদী হাসান সুমন। তিনিও মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন ।
অপরদিকে জেলা জামায়াতের সেক্রেটারী মাওলানা আজিজুর রহমান ১৫ এপ্রিল মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতায় থাকবেন কী না সেটা কেন্দ্রীয় নির্দেশনার উপর নির্ভর করছে। দলীয় সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে তিনি এবং ভাইস চেয়ারম্যান পুরুষ ও মহিলা পদে মনোনয়ন জমাদানকারী প্রার্থীগণ চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি।
উপজেলা চেয়ারম্যান পদে শেখ রাকিবুল জামান নামে এক প্রার্থীর নাম নির্বাচন অফিস সূত্রে পাওয়া গেলেও ওই প্রার্থী আদৌ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্দ্ধারিত জামানত বা নির্বাচন সংক্রান্ত কোন কাগজপত্রও নির্দ্ধারিত সময়ে জমা দেননি। কম্পিউটারের দোকানে কাজ করার সময় ভুলবশত অনলাইনে তিনি আবেদন করে ফেলেছিলেন। প্রার্থীতা যাচাই বাছাইয়ের দিনে বিষয়টি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে জানান শেখ রাকিবুল জামান।
এদিকে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে ৭ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তারা হলের বর্তমান উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নাজিমুল ইসলাম, বিগত নির্বাচনে দ্বিতীয় স্থান অর্জনকারী প্রার্থী উজ্জীবনী ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক শেখ ইকবাল আলম বাবলু, উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারী ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রোকেয়া মনসুর মহিলা কলেজের সহকারী অধ্যাপক আব্দুর রউফ, কুশুলিয়া ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী মোফাখখারুল ইসলাম নীলু, বঙ্গবন্ধু পেশাজীবী পরিষদের উপজেলা শাখার সভাপতি মুকুল বিশ^াস ও কাজী আব্দুস সালাম।
এছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান দিপালী রানী ঘোষ, কৃষ্ণনগর ইউপি’র সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শ্যামলী অধিকারী, বিষ্ণুপুর ইউপি সদস্য ফারজানা শওকাত, জামায়াতের প্রার্থী সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জয়নাব পারভীন এবং মথুরেশপুর ইউপি’র চেয়ারম্যান বীরমুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিমের মেয়ে সুরাইয়া আফরোজ সুমি।
কালিগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে ৩ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে (পুরুষ) ৬ জন এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৫ প্রার্থী (১৫ এপ্রিল বেলা ৪ টা পর্যন্ত) মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন নিশ্চিত করে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা অনুজ গাইন জানান, আগামী ১৭ এপ্রিল মনোনয়নপত্র বাছাই, ২২ এপ্রিলের মধ্যে মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার এবং ২৩ এপ্রিল প্রতিদ্ব›দ্বীতাকারী প্রার্থীদের মাঝে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ৮ মে। এ উপজেলার ১২ ইউনিয়নে ২ লাখ ৪৭ হাজার ৮১৩ জন ভোটার রয়েছেন বলে জানান এ কর্মকর্তা।
এদিকে মনোনয়ন পত্র দাখিলের পরপরই প্রার্থীরা তাদের কর্মী সমর্থকদের সাথে নিয়ে জনসমর্থন পেতে জোরেশোরেই মাঠে নেমে পড়েছেন। জামায়াত থেকে মনোনয়ন দাখিলকারী মাওলানা আজিজুর রহমান, অধ্যাপক আব্দুর রউফ ও জয়নাব পারভীন তাদের প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে নিবেন বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্র ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছেন। এজন্য চেয়ারম্যান পদে পঞ্চম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের ন্যায় এবারও সাঈদ মেহেদী ও শেখ মেহেদী হাসান সুমনের মধ্যে লড়াই হবে। সেক্ষেত্রে শেখ মেহেদী হাসান সুমনের পক্ষে জয়ের পাল্লা বেশ ভারী বলে ভোটারদের সাথে আলাপচারিতায় বেরিয়ে এসেছে। অপরদিকে ভাইস চেয়ারম্যান (পুরুষ) পদে শেখ ইকবাল আলম বাবলু ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান শেখ নাজিমুল ইসলামের মধ্যে মূল প্রতিদ্ব›দ্বীতা হতে পারে। আর মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান দিপালী রানী ঘোষ, ফারজানা শওকাত আফি ও সুরাইয়া আফরোজ সুমির মধ্যে ত্রিমূখী লড়াই হতে পারে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল।